রাজধানীর সরকারি পঙ্গু হাসপাতালের বহির্বিভাগে মঙ্গলবার বেসরকারি ট্রমা সেন্টারের একটি সিøপ নিয়ে ঘুরছিলেন হাতের ব্যথায় আক্রান্ত দিনমজুর বাচ্চু মিয়া। ওটা কি জানতে চাইতেই বললেন ডাক্তার সাহেব দিয়েছেন। কি আছে ওতে আবার প্রশ্ন করলে জবাব দিলেন একটি প্রাইভেট হাসপাতালের ঠিকানা। ডাক্তার সাহেব বলেছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো ট্রমা সেন্টারে গিয়ে করিয়ে আনতে। এভাবে কেবল বাচ্চু মিয়াই নন, বহির্বিভাগ থেকে আরো অনেক রোগীকেই ট্রমা সেন্টারসহ অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে। তবে একেবারে ঠিকানা সংক্রান্ত ছাপানো সিøপ বেশি দেখা গেল ট্রমা সেন্টারেরই। অথচ যেসব টেস্ট করাতে রোগীদের বাইরে পাঠানো হচ্ছে তার প্রায় সবগুলোই পঙ্গু হাসপাতালে স্বল্প ও বিনামূল্যে হচ্ছে। কমিশনের লোভে পড়ে এমনটি করার অভিযোগ উঠেছে। এভাবে পঙ্গু হাসপাতালের বহির্বিভাগের পাশাপাশি ওয়ার্ডগুলোতেও বাইরের রিপ্রেজেনটেটিভকে আনাগোনা করতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে এই রিপ্রেজেনটেটিভদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে হাসপাতালেরই কিছু অর্থলোভী ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীর। তারা একেকটি পরীক্ষা বাবদ অন্তত ৩০ শতাংশ কমিশন নিচ্ছেন। কতিপয় ডাক্তারের এই চিকিৎসা বাণিজ্যের কারণে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন সারাদেশ থেকে আসা শত শত গরিব, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত রোগী। তারা কখনো জানতে পারেন না বা জানার চেষ্টা না করেই ট্রমা সেন্টারে বা অন্যান্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উচ্চমূল্যে টেস্ট করাতে যাচ্ছেন। আবার অনেক রোগী বা তার আত্মীয়-স্বজন পঙ্গুর ডাক্তার এবং বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের বিষয় অনুমান করতে পারলেও রোগীর ক্ষতির ভয়ে প্রতিবাদ না করে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে কোনো কোনো রোগী ও ডাক্তারের আগ্রহ থাকে ভেতরেই টেস্ট করানোর। তাদেরই একজন বাচ্চু মিয়া। আমার সংবাদকে জানান, রক্ত ও এক্স-রে পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল তাকে। ডাক্তারের পরামর্শে শ্যামলি ট্রমা সেন্টারে যাওয়ার উদ্দেশে প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু যখন শুনলেন পরীক্ষাটি বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে পঙ্গু হাসপাতালে হয় তখন তিনি আর যাননি। বাচ্চু মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল পরীক্ষাগুলো করাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে গিয়েছিলেন কিনা। তিনি বললেন গিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি টিকিটে সরকারি ডাক্তারের হাতে লেখা এবং সিল দেখার পরও বলা হয় আরেকটি আলাদা কাগজে পরীক্ষাগুলো লিখিয়ে আনার পরই তবে হাসপাতালের ভেতরে করানো যাবে। তাই শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাগুলো না করিয়েই বাসায় ফিরলেন তিনি। কম টাকা বা বিনামূল্যে পরে এসে করাবেন বলে জানান।এদিকে অনেক রোগী অভিযোগ করছেন হাসপাতালের ভেতরে পরীক্ষা করাতে চাইলে কিছু ডাক্তার হতাশ করেন। বলেন দ্রুত বাইরে থেকে পরীক্ষা না করালে রোগীর চিকিৎসা দেরিতে শুরু হবে। তাতে রোগীরই ক্ষতি। হাসপাতালের ভেতরে টেস্টের ব্যবস্থা থাকার পরও বাইরে পাঠানো হচ্ছে কেন-জানতে চাইলে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল গণি মোল্লাহ বলেন, বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা না করানোর ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে এবং ডাক্তারদের বলা হয়েছে ভেতরে যেসব টেস্টের ব্যবস্থা আছে সেগুলো যেন বাইরে পাঠানো না হয়। তিনি জানান, দুয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ টেস্টই হাসপাতালের ভেতরে হচ্ছে। ভেতরে হয় এমন টেস্ট বাইরে পাঠানোর প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।